আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল অচিরেই বিশ্বের প্রথম আধুনিক রাজধানী শহর হিসেবে পুরোপুরি পানিশূন্য হয়ে যেতে পারে, এমন সতর্কবার্তা দিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা মার্সি কর্পস। গত এপ্রিলে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শহরটির পানির স্তর বিপজ্জনক হারে কমে যাচ্ছে। খবর লাইভ সায়েন্স
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্বল পানি ব্যবস্থাপনা, অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। শহরটির বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লাখ।
মার্সি কর্পস জানায়, কাবুলের ভূগর্ভস্থ পানির ভাণ্ডার দ্রুত নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। প্রতিবছর যত পানি তোলা হচ্ছে, তার চেয়ে অনেক কম পরিমাণে পানি প্রাকৃতিকভাবে পুনঃরিচার্জ হচ্ছে। প্রতিবছর এই ঘাটতি প্রায় ৪৪ মিলিয়ন ঘন মিটার।
জাতিসংঘের পূর্ববর্তী গবেষণা বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যেই কাবুলের ভূগর্ভস্থ পানির উৎস পুরোপুরি ফুরিয়ে যেতে পারে। শহরের অর্ধেকের বেশি কূপ ইতিমধ্যেই শুকিয়ে গেছে। অনেক পরিবার আয়-উপার্জনের বড় অংশ শুধু পানি সংগ্রহে ব্যয় করছে।
বিশ্ব জলবায়ু ও পানি নীতির বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ মাহমুদ বলেন, ‘এই পরিস্থিতি দেখে পরিষ্কার যে কাবুলের পানি ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়েছে। পানি স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে, কূপ শুকিয়ে যাচ্ছে, এবং মানুষ জীবনের মৌলিক চাহিদা পূরণে হিমশিম খাচ্ছে।’
তিনি বলেন, কাবুলের অনেক পরিবারকে এখন মাসিক আয়ের ৩০ শতাংশ পর্যন্ত খরচ করতে হচ্ছে শুধু পানি কিনতে। মার্সি কর্পস বলছে, গত এক দশকে শহরের পানির স্তর প্রায় ৩০ মিটার নিচে নেমে গেছে।
২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর আফগানিস্তানে আন্তর্জাতিক সহায়তা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। মার্সি কর্পস মনে করে, তহবিল সংকোচনের প্রভাব পড়েছে কাবুলের পানি পরিস্থিতির ওপরও।
প্রতিবেদনের উপসংহারে সংস্থাটি বলেছে- যদি দ্রুত ও ব্যাপক সংস্কার না আনা হয়, তাহলে কাবুল আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাবুলের সংকট বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বিশ্বজুড়ে অনেক শহরই পানির হুমকির মুখে। ২০১৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউন ছিল পানিশূন্য হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। ২০১৯ সালে ভারতের চেন্নাই শহরে প্রধান চারটি জলাধার একযোগে শুকিয়ে গিয়েছিল, সৃষ্টি হয়েছিল তীব্র পানি সংকট।
২০১৬ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, ১৯০০ সাল থেকে ২০০০ সালের মধ্যে পানির ঘাটতির শিকার মানুষের সংখ্যা ২৪ কোটির থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৩৮০ কোটিতে, যা বিশ্ব জনসংখ্যার ৫৮ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ মাহমুদের মতে, ‘এ সংকট কাটাতে হলে এখনই বিনিয়োগ বাড়াতে হবে টেকসই পানি ব্যবস্থাপনায়, শক্তিশালী অবকাঠামো গড়তে হবে, এবং প্রয়োজন সুশাসন। না হলে এই সংকট শুধু কাবুলেই নয়, বিশ্বের আরও অনেক নগরে ছড়িয়ে পড়বে।’